Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পাট ও আঁশজাতীয় ফসলের অর্জন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশ

পাটের গবেষণা ও উন্নয়নে উৎকর্ষ অর্জনের রূপকল্প এবং পাটের কৃষি, কারিগরি শিল্প ও জুট টেক্সটাইল বিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তরের মাধ্যমে কৃষক ও পাটসংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের উপার্জন বৃদ্ধি, দারিদ্র, হ্রাস, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষা করার অভিলক্ষ্যকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে অ্যাক্টের মাধ্যমে দেশের অন্যতম প্রাচীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিজেআরআই-এ পাটের কৃষি গবেষণা, কারিগরি গবেষণা ও জুট টেক্সটাইল গবেষণা নামে তিনটি উইংয়ের মোট ১২টি গবেষণা বিভাগ এবং পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ বিভাগসহ মোট ১৩টি বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকদের সময়োপযোগী চাহিদা ও প্রয়োজন মোতাবেক পাটের অঞ্চলভিত্তিক কৃষি গবেষণার জন্য মানিকগঞ্জে পাটের কৃষি পরীক্ষণ কেন্দ্র এবং চারটি আঞ্চলিক পাট গবেষণা কেন্দ্র এবং তিনটি পাট গবেষণা উপকেন্দ্র এবং নসিপুরে (দিনাজপুর) প্রতিষ্ঠিত একটি বীজ উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। পাট, কেনাফ ও মেস্তা ফসলের দেশি/বিদেশি বীজ সংরক্ষণ ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্য তৎকালিন ইন্টারন্যাশনাল জুট অর্গানাইজেশনের আর্থিক সহযোগিতায় ১৯৮২ সালে বিজেআরআইতে একটি জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জিন ব্যাংকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত পাট ও সমগোত্রীয় আঁশ ফসলের প্রায় ৬০০০ জার্মপ্ল­াজম সংরক্ষিত আছে। বিজেআরআই বর্তমানে তিনটি ধারায় তার গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে-
(১) পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন, এর উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত গবেষণা,
(২) পাটের শিল্প গবেষণা তথা মূল্য সংযোজিত বহুমুখী নতুন নতুন পাট পণ্য উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট পণ্যের মানোন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণা এবং
(৩) পাটের টেক্সটাইল তথা পাট এবং তুলা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম আঁশের সংমিশ্রণে পাট জাত টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন সংক্রান্ত গবেষণা।
বিজেআরআাই-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
পাটের কৃষি গবেষণার মাধ্যমে উন্নত উচ্চফলনশীল পাট, কেনাফ ও মেস্তার জাত উদ্ভাবন, লবণাক্ততা, নিম্ন তাপমাত্রা সহনশীল ও আলোক অসংবেদনশীল এবং রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন, উন্নত  কৃষিতাত্তি¡ক ব্যবস্থাপনা, উন্নত সার ব্যবস্থাপনা এবং পাট পচনের উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
পাটের শিল্প গবেষণার মাধ্যমে পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন নতুন নতুন পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাটজাত দ্রব্য সামগ্রীর মানোন্নয়নপূর্বক বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক পাট পণ্য উৎপাদনে পাট শিল্পকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা।
*     পরিবর্তিত অর্থনৈতিক অবস্থায় পাটের ভ‚মিকা নিরূপণ, নবউদ্ভাবিত পাট ও পাটজাত পণ্যের অর্থনীতি ও বিপণন গবেষণার মাধ্যমে উহার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই এবং পাটের বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাধাসমূহ চিহ্নিত করে তা দূর করার উপায় নির্ধারণ।
*    কৃষক, প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী অর্থনীতিবিদ ও  পরিকল্পনাবিদগণের পাটসংক্রান্ত জ্ঞান ও চিন্তাভাবনার বিনিময় এবং বিকাশের লক্ষ্যে নিয়মিত সেমিনার, কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা।
*     পাট ও সমশ্রেণির আঁশ ফসলের কৃষি, কারিগরি ও অর্থনৈতিক গবেষণা নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন ও পরিচালনা এবং আঁশজাত ফসল উৎপাদন এবং গবেষণার ফলাফল সম্প্রসারণ।
*     উন্নতমানের কৌলিতাত্তি¡ক বিশুদ্ধতাসহ প্রজনন পাট বীজ উৎপাদন, সরবরাহ এবং সীমিত আকারে মান ঘোষিত (টিএলএস) উন্নতমানের পাট বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ; নির্বাচিত চাষি, স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান এবং বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত এজেন্সির কাছে বিতরণ।
*     পাট ও সমশ্রেণির আঁশ ফসল, পাটজাত পণ্য ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত গবেষণার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গবেষণা কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, পাইলট প্রজেক্ট এবং খামার স্থাপন।
*    ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন জাতের পাটের প্রদর্শন এবং এই সব জাতের পাট উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কৃষক প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকল্প এলাকা নির্বাচন এবং কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
*    পাট ও সমশ্রেণির আঁশ ফসলের চাষের উন্নত পদ্ধতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মচারী এবং চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং পাট সংক্রান্ত কারিগরি গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পাট পণ্য উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন।          
২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি গবেষণা সংক্রান্ত কার্যক্রম ও অর্জন
বিজেআরআই প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৫০টি পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে ২২টি (৯টি দেশি পাট, ৮টি তোষা পাট, ৩টি কেনাফ ও ২টি মেস্তা) উন্নত জাত বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য  সুপারিশ করা হচ্ছে। সুপারিশকৃত এই ২২টি উচ্চফলনশীল জাতের মধ্যে বর্তমান সরকারের সময়কালে ১১টি জাত (দেশি পাটের-৪টি, তোষা পাটের-৩টি, কেনাফের-২টি এবং মেস্তার-২টি) উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশে পাট বীজের অভাব দূরীকরণে বিজেআরআই পাট বীজ উৎপাদনের জন্য ‘নাবী পাট বীজ উৎপাদন’ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। স্বাভাবিক নিয়মে বীজ উৎপাদনে যেখানে প্রায় ৮-৯ মাস সময়ের প্রয়োজন হয় এবং ফলনও হয় কম, সেখানে নাবী পদ্ধতিতে মাত্র ৪-৫ মাসে দ্বিগুণ এরও বেশি (প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি/হেঃ) ফলন পাওয়া যায়। ফলে কৃষক পর্যায়ে এ প্রযুক্তিটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বীজের ঘাটতি পর্যায়ক্রমে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তাছাড়া ‘নিজের বীজ নিজে করি’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাট ও পাট জাতীয় ফসলের কৃষিতাত্তি¡ক ব্যবস্থাপনা, সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা, পাটভিত্তিক শষ্য পর্যায় এবং পাট পচন প্রক্রিয়ার ওপর ৭৫টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বর্তমানে কৃষি গবেষণার বিভিন্ন বিভাগে পাটের জার্মপ্লাজম ক্যারেক্টারাইজেশন, জাত উন্নয়ন, বালাই ব্যবস্থাপনা, কৃষিতাত্তি¡ক ব্যবস্থাপনা, সার ব্যবস্থাপনা, পাট ভিত্তিক শস্য পর্যায় উদ্ভাবন, উন্নত পচন পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে মোট ১১১টি গবেষণা পরীক্ষণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তোষা পাটের একটি অগ্রবর্তী লাইন জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক জাত হিসাবে বিজেআরআই তোষা পাট-৮ নামে ছাড়করণ করা হয়েছে। পাট, কেনাফ ও মেস্তার ৯০টি জার্মপ্লাজমের চারিত্রিক গুণাগুণ মূল্যায়ন করা হয়েছে, এই জার্মপ্লাজমগুলো উন্নত জাত উদ্ভাবনে ব্যবহার করা যাবে। জিন ব্যাংকে সংরক্ষিত জার্মপ্লাজমগুলো হতে গত বছর ৫০০টি জার্মপ্লাজমের বীজবর্ধন করে জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে মূল্যায়ন কাজে ব্যবহার করা হবে। পাটের ২২টি জার্মপ্লাজমের মলিকুলার বৈশিষ্ট্যায়ন/চরিত্রায়ন করা হয়েছে। দেশি, তোষা ও কেনাফের বিভিন্ন জাতের মোট ১৭০০ কেজি প্রজনন বীজ উৎপাদন করা হয়েছে যার মধ্য থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিএডিসি ও অন্যান্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬৫৭.২৯ কেজি সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রজনন বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৭৪.৪০ কেজি নিউক্লিয়াস বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। চ‚ড়ান্ত মাঠ পরীক্ষণের মাধ্যমে ১১টি নতুন ছত্রাকনাশক কার্যকরী হিসাবে ভালো পাওয়া গেছে এবং কৃষকের ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাট পচনের জন্য অনুজীব সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তাদের পাট পচন গুণাগুণ নির্ণয়করণ কার্যক্রম চলছে। পানি স্বল্প এলাকায় পাটের রিবনিং করার জন্য ‘অটো-জুট পাওয়ার রিবনার’ উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এর আধুনিকায়ন কার্যক্রম চলমান আছে। অতি অল্প সময়ে পাট ফসল কর্তনের জন্য ‘বিজেআরআই মাল্টিফাংশন জুট হার্ভেস্টার’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্বল্প পানি এলাকায় পাটের রিবন রেটিং প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত পাট ও সমজাতীয় আঁশ ফসলের নতুন জাতসমূহকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বিজেআরআই এর আঞ্চলিক ও উপকেন্দ্রের মাধ্যমে ১১৯৫টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক/উপকেন্দ্রের মাধ্যমে ১২.০০ টন মান ঘোষিত বীজ (টিএলএস) উৎপাদন করা হয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে কারিগরি গবেষণা সংক্রান্ত কার্যক্রম ও অর্জন
কারিগরি গবেষণা উইংয়ের বিদ্যমান বিভাগগুলোর মাধ্যমে নতুন পাট পণ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট পণ্যের মানোন্নয়নের বিষয়ে গত ০১ বছরে ৪৪টি গবেষণা কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে। নদীর বাঁধ নির্মাণ, রাস্তার উপরিভাগের মাটির ক্ষয়রোধ, পাহাড়ের ঢাল রক্ষার জন্য নবউদ্ভাবিত ‘ন্যাচারাল এডিটিভ ট্রিটেড জুট জিও-টেক্সটাইল’ প্রযুক্তিটি একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিজেএমসির নিকট হস্তান্তরের করা হয়েছে। প্রযুক্তিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশের প্রায় ২০০ (দুইশত) কোটি টাকার সিনথেটিক জিও টেক্সটাইল আমদানি সাশ্রয় এবং প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। অপ্রচলিত দ্রব্য লিচু পাতা থেকে সহজলভ্য পরিবেশ বান্ধব ৪টি প্রাকৃতিক রঙ উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা দ্বারা পাট বস্ত্র ও সুতি বস্ত্রকে রঞ্জিত করা যায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্যকে ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। ওয়ার্প-এ তুলা এবং ওয়েফ্ট-এ পাটের সুতা ব্যবহার করে জুট-কটন ইউনিয়ন ফেব্রিক তৈরি করে তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মূল্য সংযোজিত পণ্য যেমন-সেমিনার ব্যাগ, এক্সিকিউটিভ ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, জায়নামাজ ইত্যাদি প্রস্তুত করে ও প্রদর্শন করা হচ্ছে। পাটজাত দ্রব্যের বহুমুখী ব্যবহার, রপ্তানিযোগ্য পাটজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে হালকা পাটবস্ত্র তৈরির নিমিত্তে চিকন সুতা (১০০ টেক্স) উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল তৈরির লক্ষ্যে পাট আঁশ এবং পাটের কাপড় দিয়ে রিইনফোর্সট কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল তৈরি করা হয়েছে। পাট ও সুতি বস্ত্রের জন্য স্বল্প মূল্যের বিø­চিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। পাট সুতাকে রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত করে উলের ন্যায় সুতা তৈরি করা হয়েছে, যা দ্বারা স্বল্প মূল্যে স্যোয়েটার/কার্ডিগান তৈরি করা সম্ভব। বহুমুখী টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহারের জন্য, পাটের তন্তুর সাথে কলাগাছের আঁশ মিশ্রিত করা হয়েছে, এ জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কলা গাছের আঁশের নমুনা সংগ্রহ করে রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উহার আঁশের গুণাগুণ নির্ণয় করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, কলাগাছের আঁশের আলফা-সেলুলোজের মান যথেষ্ট ভালো এবং তার পরিমাণ প্রায় ৫৯.৭৫% যা পাট তন্তুর আলফা-সেলুলোজের পরিমাণের প্রায় কাছাকাছি। পাট থেকে উন্নত মানের বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব কম্পোজিট যেমনÑ ঢেউটিন, চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ, দরজার পাল্লা ইত্যাদি তৈরির পদ্ধতি উদদ্ভাবন করা হয়েছে। পাটের কাপড়ে সাথে পলিমার রেজিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ সংমিশ্রিত করে কক্ষ তাপমাত্রায় যা সহজেই হাতে তৈরি করা যায়। পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহারের জন্য পাটবস্ত্রকে বিভিন্ন কেমিক্যাল দ্বারা ট্রিটমেন্ট করে অগ্নিরোধী পাট বস্ত্র তৈরি করা হয়। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পাট থেকে লাভজনক ও উন্নতমানের পাল্প তৈরি করা হয়েছে। পাল্প থেকে কাগজ, মাইক্রো-ক্রিস্টালাইন সেলুলোজ (এমসিসি) ও কার্বক্সিমিথাইল সেলুলোজ (সিএমসি) তৈরি করা হয়েছে। পাট পাতা অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এটি একটি মৌসুমি ফসল বিধায় পাতাকে প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ ও চা উৎপাদনে সহজ প্রযুক্তি উৎদ্ভাবন করা হয়েছে। পাট পণ্যের ডাইং-এর কন্ডিশন অপটিমাইজ-করার জন্য কস্টিক সোডা, পানি ও বিভিন্ন ডাই দ্বারা পাট পণ্য রঞ্জনের জন্য অপটিমাম মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জুট-টেক্সটাইল উইং-এ বিদ্যমান বিভাগের মাধ্যমে নতুন পাট পণ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট, তুলা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক তন্তু সংমিশ্রণে পণ্যের উৎপাদন ও মানোন্নয়নের বিষয়ে ০৮টি গবেষণা কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে। পাট-তুলা মিশ্রিত সুতা দিয়ে পাঞ্জাবি তৈরি করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই কাপড় সব বয়সী মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী হওয়ার কারণে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। পাট, তুলা ও ভেড়ার পশম মিশ্রিত আঁশ দিয়ে কম্বল তৈরি করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই কম্বল শীত প্রধান এলাকায় (উত্তরবঙ্গ) মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী হওয়ার কারণে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে  কৃষক লাভবান হবে এবং অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষা পাবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশীয় ভেড়ার পশমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।
জিনোম গবেষণায় সাফল্য : জীব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বে সর্বপ্রথম দেশি ও তোষা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার করা হয়েছে এবং পাটসহ পাঁচশতাধিক ফসলের ক্ষতিকারক ছত্রাক গধপৎড়ঢ়যড়সরহধ ঢ়যধংবড়ষরহধ-এর জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। উন্মোচিত জিনোম তথ্য ব্যবহার করে উচ্চফলনশীল, বিভিন্ন প্রতিক‚লতা সহনশীল এবং পণ্য উৎপাদন উপযোগী পাট জাত উদ্ভাবনের জন্য বর্তমান সরকার ‘পাটবিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। উক্ত আবিষ্কারের ফলে পাটের বিভিন্ন প্রতিক‚লতা সহনশীল (লবণাক্ততা, খরা, বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগজীবাণু সহনশীল ইত্যাদি), কম লিগনিন সমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ২৮% জমি লবণাক্ততার কারণে পতিত থাকে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের একটি ব্যাপক এলাকা খরাপ্রবণ। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ওই সকল পতিত জমিতে পাটচাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। ফলে পতিত/ব্যবহার অনুপযোগী জমি আবাদের আওতায় আসবে। এছাড়া কম লিগনিন সমৃদ্ধ জাত উদ্ভাবন সম্ভব হলে বস্ত্র শিল্পে তুলার বিকল্প হিসাবে অথবা তুলার সাথে সংমিশ্রণে পাটের ব্যবহারে প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
*    দেশে পাট উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে সমুদ্র  উপক‚লর্তী লবণাক্ত অঞ্চলে পাট চাষ সম্প্রসারণ এবং লবণাক্ততা সহিষ্ণু পাট জাত উদ্ভাবনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
*     পণ্যভিত্তিক ও কাগজের মÐ তৈরির জন্য সারা বছর চাষ উপযোগী পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের জাত উদ্ভাবন করা। বিভিন্ন বায়োটিক (রোগজীবাণু ও পোকামাকড়) এবং এবায়োটিক (স্বল্প তাপমাত্রা, খরা ইত্যাদি) প্রতিক‚লতা সহনশীল পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা।
*    অনুর্বর জমি ব্যবহারের জন্য কাঁটাবিহীন মসৃণ কাÐ বিশিষ্ট কেনাফ ও মেস্তার জাত উদ্ভাবন করা।
*     জীব প্রযুক্তি (বায়োটেকনোলজি) ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ জীবাণু ও পোকামাকড় সহনশীল উচ্চফলনশীল পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের জাত উদ্ভাবন করা।
*    গবেষণায় এবং কৃষকের মাঠে ফলনের পার্থক্য হ্রাস করে পাটের সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
*    পাটের উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং স্থানোপযোগী (লোকেশন স্পেসিফিক) পাট পচন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
*     জাতীয় বীজ কর্মসূচির সহায়তার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বীজ উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠানকে চাহিদা অনুযায়ী প্রজনন বীজ সরবরাহ করা। পাট বীজের অভাব দূরীকরণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাটের মান ঘোষিত বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করা।
*   বর্তমানে ফরিদপুর, যশোর ছাড়াও বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক পাটের আবাদ হয়। কিন্তু উক্ত রাজশাহী অঞ্চলের পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের দেখাশোনা করার কোনো কেন্দ্র সেখানে নেই। অতএব, উক্ত এলাকায় বিজেআরআই-এর একটি নতুন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা করা।
*    পাটের আরো সুক্ষ্ম সুতা (লো-কাউন্ট) উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
*   প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের মান উন্নয়নপূর্বক উৎপাদন খরচ হ্রাস করা।
*   শুধুমাত্র পাট এবং পাটের সাথে অন্যান্য আঁশের (তুলা, পলিয়েস্টার, এ্যাক্রাইলিক ইত্যাদি) মিশ্রণে নতুন নতুন  বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
*     পাট ও উলের সংমিশ্রণে সুতা (ব্লেন্ডেড ইয়ার্ন) উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
*     পাটের বায়োকম্পোজিট প্ল­াস্টিক দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
*   পাট আঁশে ধুলাবালি যাতে মিশ্রিত হতে না পারে তার জন্য আঁশ শুকানো ও পচানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
*  পাট আঁশের কেমিক্যাল প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন, স্মল স্কেল ওয়েট প্রসেসিং প্ল­্যান্ট স্থাপন, মিনি স্পিনিং প্ল­্যান্ট স্থাপন করে আধুনিক গবেষণার মাধ্যমে যুগোপযোগী পণ্য সামগ্রী প্রস্তুত করা।
* বিজেআরআই উদ্ভাবিত বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন প্রযুক্তির বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।
পরিশেষে পাট একটি শিল্পজাত ফসল হওয়ায় এর সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ, প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়সমূহের মধ্যে ও আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দৃঢ় সমন্বিত প্রচেষ্টা নিতে হবে।

 

কৃষিবিদ ডঃ মোঃ মাহবুবুল ইসলাম
পরিচালক, (পরিকল্পণা প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, মানিক মিয়া এভেনিউ, ঢাকা-১২০৭। মোবাইলঃ +৮৮০১৫৫২৪১৬৫৩৭, ই-মেইল--mahbub-agronomy@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon